জীবনযাপন

৪০০ খুন করা সিরিয়াল কিলার লোপেজের টার্গেট ছিলো কারা?

0
The Monster of 2172

সিরিয়াল কিলার, দিনের বেলায় সাধারণ মানুষের মতো ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলো আধারে হলেই যেন পাল্টে যান। বেশিরভাগ সিরিয়াল কিলারই ছিলেন ঠান্ডা মাথার খুনি। আবার কেউ ছিলেন মানসিক বিকারগ্রস্ত, কারো নেশাই ছিল খুন করা।

যেমন-জ্যাক দ্য রিপার লন্ডনের পতিতাদের বেছে বেছে হত্যা করতেন। বিকিনি কিলার খ্যাত নেপালের চার্লস শোভরাজ হত্যা করতেন ছোট পোশাক পরা নারীদের।

তেমনই কলম্বিয়ার মানুষের কাছে আজও আতঙ্কের নাম পেদ্রো আলোনসো লোপেজ।  ৪০০-এর বেশি খুন করেছেন লোপেজ। তার শিকার ছিল শুধু অপ্রাপ্তবয়স্কারাই।

শুরুতে আদিবাসী অপ্রাপ্তবয়স্কা শিশুদের ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের কব্জায় আনতেন। এরপর ধর্ষণ ও খুন। ১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে অন্তত ২০০ অপ্রাপ্তবয়স্কা তার হাতে নিগৃহীত হয়েছে। সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন লোপেজ। শুধু পেরুতেই তিনি ৯-১২ বছর বয়সী প্রায় ১০০ মেয়েকে হত্যা করেছিলেন। কলম্বিয়া, পেরু, ইকুয়েডর জুড়ে তিনি খুন করেছিলেন ৪১০ জনকে।

সে সময় রীতিমতো পুলিশের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিলেন লোপেজ। পুরোই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন লোপেজ। কোনো কূল-কিনারাই করতে পারছিলেন না কলম্বিয়ান পুলিশ। সেই সঙ্গে গোয়েন্দাদেরও ঘাম ঝরিয়েছেন এই সিরিয়াল কিলার। পুলিশ তার নাম দিয়েছিল ‘আন্দিজের দানব’। তবে অবশেষে পুলিশের কাছে ধরা পড়েন লোপেজ।

তিনি নিজেই স্বীকার করেন তার এসব খুনের প্রেক্ষাপট। ১৯৯২ সালে ইকুয়েডরের জেলে বন্দি অবস্থায় লোপেজের একটি সাক্ষাৎকার নেন সাংবাদিক রন লেটনার। সেই সাক্ষাৎকার একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। তখন থেকেই কলম্বিয়ান এই সিরিয়াল কিলারের কীর্তি আলোড়ন ফেলে দেয় গোটা বিশ্বে।

বেশিরভাগ অপরাধীর মতোই লোপেজের শৈশব ছিল খুবই খারাপ। ১৯৪৮ সালের ৮ অক্টোবর কলম্বিয়ায় জন্ম লোপেজের। তার মা পেশায় ছিলেন একজন যৌনকর্মী। তাই ছোট থেকেই এই নিষিদ্ধ জগতের সঙ্গেই ছিল লোপেজের বসবাস। সেই দুনিয়াই ছিল তার কাছে স্বাভাবিক। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে তেমন ধারণাই ছিল না তার।

নিজের মাকেই এই পেশায় ছোট থেকেই দেখেছেন তিনি। লোপেজের শিশুমনে মায়ের কার্যকলাপ গভীরভাবে দাগ কেটেছিল। যা তার মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। ছোটবেলায় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন লোপেজ। তবে বিকৃত মানসিকতা ছেয়ে যায় ছোট্ট লোপেজের মনে।

নিজের ছোট বোনের সঙ্গেই অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে মায়ের কাছে ধরা পড়েন। তখন লোপেজের বয়স মাত্র ৮ বছর। হয়তো ঠিকভাবে বুঝেই উঠতে পারেনি কী করেছেন তিনি। তবে লোপেজের মা এর জন্য তাকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

লোপেজ পালিয়ে রাজধানী শহর বোগোতায় চলে আসেন। এখানে এসে তার পরিচয় হয় এক ব্যক্তির সঙ্গে। যে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বলাৎকার করেছিলেন। ১২ বছর বয়সে আমেরিকার এক অভিবাসী পরিবারের হাতে পড়ে কিশোর লোপেজ। তারা তাকে অনাথ আশ্রমে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। দু’বছর পর সেখান থেকেও পালিয়ে যায় সে। কেউ বলেন, ওই বয়সে আশ্রমের এক পুরুষ শিক্ষকের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন লোপেজ। কেউ আবার বলেন, শিক্ষকের সঙ্গেই পালিয়ে গিয়েছিলেন আশ্রম থেকে।

অপরাধ জগতের সবখানেই তার হাতেখড়ি হয়েছে। একবার গাড়ি চুরির অপরাধে জেল খাটার সময় কারাগারেই গণবলাৎকারের শিকার হন তিনি। নির্মমভাবে তার ওপর অত্যাচার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তবে ধর্ষকদের জেলেই খুন করেছিলেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে পেরুতে চলে আসেন। সেখানেই প্রথম ছোট মেয়েদের ধরে খুন করতে শুরু করেন। ১৯৭৮ সালের মধ্যে ১০০-এর বেশি অপ্রাপ্তবয়স্কাকে খুন করে ফেলেছিলেন তিনি।

ওই বছর এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাতে প্রথমবার ধরা পড়েন লোপেজ। তারা তাকে মেরে ফেলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু আমেরিকার এক সাধু তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় লোপেজকে। সেখান থেকে দ্রুত মুক্তিও পেয়ে যান।

পেরু থেকে আবার কলম্বিয়া চলে আসেন লোপেজ। সেখান থেকে ইকুয়েডর যান। প্রতি সপ্তাহে তিন জন করে বাচ্চা মেয়েকে খুন করতে শুরু করেন লোপেজ। কম বয়সী এই শিশুরা লোপেজের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে যখন মারা যেত; তখনও তাদের রেহাই দিন না লোপেজ।

মৃত মেয়েদের সঙ্গেও বিকৃত যৌনাচার করত। এরপর মাটি চাপা দিয়ে পরবর্তী শিকারের উদ্দেশে বেড়িয়ে পড়তেন। ১৯৮০ সালের মার্চে অবশেষে ধরা পড়েন লোপেজ। এক অপ্রাপ্তবয়স্কাকে অপহরণের চেষ্টা ব্যর্থ হলে তাকে ধরে ফেলে পুলিশ। ততদিনে ২০০ নাবালিকাকে হত্যা করেছে সে। খুনের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৪০০।

পুলিশ তার বাড়ির আঙিনা থেকে ৭৪টি মাটিচাপা দেওয়া মৃতদেহ খুঁজে পায়। যাদের বয়স ছিল ৮-১২ বছরের মধ্যেই। এ ছাড়াও বিভিন্ন জায়গা থেকে আরও অসংখ্য শিশুর দেহাবশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। একেক গর্তে ৬-৭ জন করে মাটি চাপা দিয়েছিলেন লোপেজ।

১৯৮০ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ১৮ বছর জেল খাটেন লোপেজ। তবে লোপেজকে মানসিক ভারসাম্যহীন ঘোষণা করেছিল জেল কর্তৃপক্ষ। এজন্য ইকুয়েডরের মানসিক হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা দেখতে পান লোপেজের আচরণ একেবারে স্বাভাবিক মানুষের মতোই হয়ে গেছে। তাই তাকে ৫০ ডলার বন্ডে মুক্তি দেওয়া হয়।

এর কিছুদিন পরই নিখোঁজ হয়ে যান লোপেজ। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছেন। কোথাও তার দেখা নেই। তবে হত্যা বা ধর্ষণের ঘটনাও তেমন ঘটেনি। পেরিয়ে যায় ৪ বছর। ২০০২ সালে নতুন একটি খুনের ঘটনায় লোপেজের নাম উঠে আসে। তবে লোপেজের নাগাল পায়নি পুলিশ।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ২০০৬ সালে লোপেজকে ‘সবচেয়ে দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার’ আখ্যা দিয়েছিল। তবে অপরাধকে মহিমান্বিত করার অভিযোগে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। পরে লোপেজের সেই ‘রেকর্ড’ প্রত্যাহার করে নেয় গিনেস ওয়ার্ল্ড।

আরও পড়ুন : কিভাবে পেনড্রাইভ লক করবেন

কালচে হলুদ বৃহস্পতির দুর্লভ ছবি নাসার টেলিস্কোপে

Previous article

চোখের কারসাজি, কোন প্রাণী কতটা নির্ভর

Next article

You may also like

Comments

Leave a reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *